পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদের জন্য মায়ের আহাজারি থামছে না
ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ২১ জুলাই নিহত হন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (ওসি) মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কালান্দরে চলছে শোকের মাতম।
গতকাল রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে নিহত এই পুলিশ কর্মকর্তার এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এলাকাবাসী জানান, পুলিশ পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া ছিলেন পরোপকারী মানুষ। কেউ সমস্যায় পড়ে এলাকার নাম বলে কল দিলেই তিনি সমাধান করে দিতেন। তার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও গুলজান বেগমের আট ছেলে-মেয়ের মধ্যে মাসুদ ষষ্ঠ। ১৯৯৬ সালে তিনি উপ-পরিদর্শক হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। অনেক দিন ধরে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ঢাকার বনশ্রী এলাকায় বসবাস করতেন। তার বড় মেয়ে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। মেজো মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সবার ছোট ছেলে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
রোববার দুপুরে মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শুনশান নীরবতায় নির্বাক পরিবারের সদস্যরা। এ সময় ঘরে ঢুকতেই দেখা যায় নিহত এই পুলিশ কর্মকর্তার শতবর্ষ বয়সী মা গুলজান বেগম খাটে শুয়ে ছেলের ফ্রেম বাঁধানো একটি ছবি নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বয়সের ভারে কিডনি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় আক্রান্ত এই মায়ের আহাজারি কোনোভাবেই থামছে না। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। বারবার তিনি আহাজারি করে বলছেন- ‘তোমরা আমার কলিজার টুকরা ছেলেকে এনে দাও; আমার ছেলে নেই এখন কে আমাকে ওষুধ কিনে দেবে? আমার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
নিহত মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার ছোট ভাই সোহেল ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়দায়িত্ব ছিল ভাইয়ের হাতে। আমাদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের আগে মায়ের খবর নিত। মাস শেষ হওয়ার আগেই মায়ের ওষুধ কিনে পাঠিয়ে দিত। প্রতিমাসে মাকে একবার ডাক্তার দেখাতো।
তিনি আরও বলেন, ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ কর্মরত থাকলেও ঢাকার বাসা থেকে গিয়ে অফিস করতেন। ঘটনার দিন বাসা থেকে চা খেতে সন্ধ্যার পর বের হন তিনি। পরে অপরিচিত নম্বর থেকে বাসায় কল দিয়ে জানানো হয় ভাইকে কুপিয়ে রাস্তার মধ্যে ফেলা রাখা হয়েছে। তাকে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যে মানুষ মানুষকে এভাবে কখনও মারতে পারে না। আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই।
নিহতের স্ত্রী মেরিনা আক্তার বীনা বলেন, গত ১৯ জুলাই মাসুদকে বাস থেকে বের হতে না করেছিলাম। কিন্তু সে সবাইকে সতর্ক করে নিজেই বের হয়ে মৃত্যু ডেকে আনল। তার সমস্ত শরীরে শুধু আঘাতের চিহ্ন। ধারালো অস্ত্র ও রড দিয়ে মাথায়-শরীরে আঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় এক নারী রাস্তা থেকে মাসুদকে তুলে নিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন রোববার (২১ জুলাই) সকালে মারা যায়। পরে ওইদিন রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। সহযোগিতা না পেলে তিন সন্তান নিয়ে চলা খুব কষ্ট হয়ে যাবে।