সৌর বিদ্যুতে কমবে সেচ খরচ, লাভবান হবেন সবজি চাষিরা
দেশের মোট সবজির চাহিদার অনেটাই সরবরাহ করা হয় যশোর জেলার কৃষি খাত থেকে। এ জেলার কৃষকেরা ধানের পাশাপাশি সারা বছরই বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেন। ফুল চাষেও প্রধান যশোর জেলা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি ফসলের মধ্যে বিশেষ করে ধান চাষে সেচ প্রকল্প নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। কৃষি জমিতে সেচ সুবিধার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে যশোরের সবজি খাত। তবে এবার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরের কৃষকদের সবজি চাষে সেচ প্রকল্পের আওতায় সেচ পাম্প নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থার সহোযোগিতায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন যশোর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ‘জলবায়ু বান্ধব সবজি ও ফুলের ভ্যালু চেইন (বিডি-৭১)’ নামক সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার কাশিমপুর, কচিয়া ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নে মোট ৪টি পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে যশোর কৃষি বিভাগ। স্থাপিত সেচ পাম্পগুলো স্থানীয় নারী সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্বল্প খরচে কৃষি উৎপাদনে সেচ কাজে পরিচালিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ডহেরপাড়ায় নির্মাণ করা সেচ পাম্পের উদ্বোধন করেন উদ্যোগ গ্রহণকারী সংস্থা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের নির্মাণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাদিক ঢাকা পোস্টকে জানান, সৌর বিদ্যুৎচালিত ৪টি সেচ পাম্পের একেকটির ক্ষমতা ৫ হর্সপাওয়ার এবং পানির ডেলিভারি ৩ ইঞ্চি। সেচ পাম্প থেকে ঘণ্টায় ৩৬ হাজার লিটার পানি উঠবে, যা প্রায় ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করতে পারবে। তবে কৃষকরা প্রয়োজনে একেকটি সেচ পাম্পে অতিরিক্ত পাইপ লাইন করে প্রায় ৫০ বিঘা পর্যন্ত সেচ সুবিধা নিতে পারবে।
এদিকে সবজি চাষে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসায় খুশি এ অঞ্চলের সবজি চাষিরা। তারা বলছেন, সময়ের পাশাপাশি সবজি উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে আসবে।
কাশিমপুর ডেহেরপাড়া গ্রামের কৃষক শাহাদাৎ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য সেচ পাম্প থেকে সেচ সুবিধা নিতে হলে আমাদের বিঘা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হতো। অপরদিকে ডিজেলের দামও বেশি। শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিতে গেলে আমাদের প্রতি চাষে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। তবে সৌর বিদ্যুৎচালিত এই সেচ পাম্প পেয়ে আমরা উপকৃত। কারণ আমাদের ৩০০ টাকায় জায়গায় ১০০ টাকায় আমরা সেচ সুবিধা পাচ্ছি।
জিয়াউর রহমান নামে আরেক কৃষক বলেন, মাথার ওপরে সূর্য থাকলেই আমরা সেচ পাম্প থেকে পানি পাচ্ছি। বিদুৎতের কোনো ঝামেলা নেই আবার খরচও কম। আমাদের সময়ের পাশাপাশি খরচ অনেক কমে যাচ্ছে। ফলে আমরা সবজি চাষে লাভবান হতে পারব।
তাইজাল শেখ নামে এক কৃষক বলেন, আজকে উদ্বোধনের পর পরই পাম্প চালিয়েছে, পানি পেয়েছি। জমিতে এখন চারা রোপণ করছি। আগে সবজি চাষ করতে গিয়ে যেমন সেচ নিয়ে যতো চিন্তা ছিল এখন আর সেই চিন্তা নেই। আমরা সমিতির মাধ্যমে সিরিয়াল অনুযায়ী সবাই সেচ সুবিধা পাচ্ছি।
হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নূরুননাহার বলেন, আমরা যখন যশোর অঞ্চলে আসি তখন আমরা লক্ষ্য করলাম এ অঞ্চলে অনেক ভালো সবজি চাষ হয়। তবে সেচ সমস্যার কারণে এ অঞ্চলে সবজি চাষিরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কারণ কিছু কিছু সেচ ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত। যার ফলে এখানকার চাষিদের সবজি চাষে লাভের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ুবান্ধব সেচ পাম্পের প্রতি আগ্রহ আছে। সেই দিক বিবেচনা করে আমরা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্রকল্প কৃষকদের মাঝে নিয়ে এসেছি।
জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের পরিচালক (কর্মসূচি) কাজী মাজেদ নেওয়াজ বলেন, যশোর অঞ্চলের সবজি চাষ ও বিপণনে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ নতুন একটি মাত্রা যোগ হলো এ অঞ্চলে সবজি চাষিদের জন্য। এ অঞ্চলের সবজি চাষিরা স্বল্প খরচে সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প থেকে পানি নিয়ে সবজি চাষে ব্যবহার করতে পারবে। আমরা আশা করি এর মাধ্যমে সবজি উৎপাদনের সঙ্গের জড়িত কৃষকেরা লাভবান হবেন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সুশান্ত কুমার তরফদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোরের কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে থাকেন। যা যশোরের চাহিদা মিটিয়েও বাহিরের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এই সবজি চাষে কৃষকের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ কৃষিজমিতে সেচের পানির স্বল্পতা। এই সমস্যা দূর করতে হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামে দুটি সংস্থা এগিয়ে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের এ কাজে সহোযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, সৌর বিদ্যুৎচালিত একেকটি এই সেচ পাম্পের আওতাধীন ২০-২৫ বিঘা জমিতে সেচ সমস্যা ছাড়াই কৃষকেরা নির্বিঘ্নে সবজি উৎপাদন করতে পারবে। কৃষকেরা চাইলে কমিটির মাধ্যমে পাইপ সংযোজন করে ৫০ বিঘা পর্যন্ত সেচ নিতে পারবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকেদের নিরাপদ, বালাইনাশক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে আছে এবং থাকবে।