জাতীয়

রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন : কালেমা পড়তে পড়তে নিথর হয়ে যান শাহেদ

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে রিজওয়ান কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় সাজ্জাদ মিয়ার মোবাইল ও মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে। সেই দোকানে দেড় বছর ধরে চাকরি করতেন শাহেদ। রিজওয়ান কমপ্লেক্সের পাঁচতলায় একটি বাসা নিয়ে ভাড়া থাকতেন সাজ্জাদ মিয়া ও শাহেদ। প্রতিদিন দোকান বন্ধের পর এখানেই থাকতেন তারা। তবে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মার্কেট বন্ধ থাকায় তারা প্রায় সময়েই বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়িতে চলে যেতেন। এবার দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়া বাড়িতে গেলেও যাননি শাহেদ। 

বাড়িতে না গিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দিবাগত রাতে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় তার। প্রাণে বাঁচার সব চেষ্টা করেও শাহেদ চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি সাতকানিয়ার মির্জাখীল এলাকার বেট্টা মিয়ার ছেলে।

দোকানের মালিক সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি প্রতিবারের মতো বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত সাড়ে ১২টা বেজে যায়। শরীর ক্লান্ত থাকায় দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ি। এরই মধ্যে রাত পৌনে ২টায় শাহেদের ফোন পেয়ে জেগে উঠি। ফোন দিয়েই সে (শাহেদ) ভয়ার্ত কণ্ঠে বলতে থাকে, ‘পাশের মোহাম্মদী মার্কেটে ধরা আগুন আমাদের রিজওয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আমার বাসায় আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন।’

তিনি বলেন, ‘এরপর আমি আশপাশের সবাইকে ফোন দিয়ে শাহেদকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে বলি। পরে আমিও মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে শহরের উদ্দেশে রওনা দেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শাহেদকে বারবার বলতে থাকি মুখে ভেজা কাপড় বেঁধে মার্কেটের ছয় তলায় উঠে যেতে। সে আমাকে জানায়, চারিদিকে অন্ধকার আর ধোঁয়ার কারণে সে বের হতে পারছে না। আমি বলতে থাকি, তোর তো গলিপথ চেনা, যে কোনোভাবে দৌড় দে। কিন্তু সে চেষ্টা করেও পারেনি। একপর্যায়ে রাত ১টা ৫৮ মিনিটে আমার সঙ্গে শাহেদের সর্বশেষ কথা হয়। তখন সে বলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে কালেমা পড়তে পড়তে নিথর হয়ে যায়। পরে বারবার ফোন দিলেও আর ফোন ধরতে পারেনি।’

সাজ্জাদ মিয়া জানান, এরপর রাত পৌনে ৩টার দিকে শহরে এসে পৌঁছান তিনি। এসে শাহেদকে উদ্ধার করতে একাই উঠে পড়েন রিয়াজউদ্দিন বাজারের রিজওয়ান প্লাজার সেই পাঁচ তলার বাসায়। অন্ধকার আর ধোঁয়ার মধ্যেই শাহেদকে উদ্ধার করতে ঢুকে পড়েন বাসায়। পরে টয়লেটে গিয়ে দেখেন, সেখানে নিথর হয়ে পড়ে আছেন শাহেদ।

প্রসঙ্গত, গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে তিনজন নিহত হন। ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে রিয়াজউদ্দিন মোহাম্মদীয়া প্লাজা নামে একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন পার্শ্ববর্তী রিজওয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের নন্দনকানন, চন্দনপুরা, আগ্রাবাদ ও লামার বাজারসহ মোট চারটি স্টেশনের আটটি ইউনিট কাজ করে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading