জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাপানের সহায়তা চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে জাপান অর্থবহ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক ও বন্ধন ঐতিহাসিক। রোহিঙ্গা সংকট স্থায়ীভাবে নিরসনে জাপান এগিয়ে আসবে বলে আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি জানিয়েছেন, দেশটির অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (ওএসএ) কাঠামোতে যুক্ত হতে নির্বাচিত প্রথম চার দেশের একটি বাংলাদেশ।

শনিবার (২৬ আগস্ট) ঢাকায় জাপান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ‘জাপান-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারত্ব বাস্তবায়ন: কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক পর্যায়ের সম্পর্ক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।

প্যান এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পারি) আয়োজিত এ বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহরিয়ার বলেন, কৃষি, রপ্তানি ও মানবসম্পদ- এই তিন স্তম্ভে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অর্থনীতি ও ডিজিটালসহ বিভিন্ন খাতে বর্তমানে জাপান সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল মার্কেট। প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যগত পণ্যের মার্কেটও রয়েছে আমাদের। প্রথমবারের মতো চলতি বছরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। প্রতিমন্ত্রী ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার কানেকটিভিটি বাড়ানোর চলমান কার্যক্রমে জাপানি সহায়তার কথা উল্লেখ করেন এবং আগামী দিনে দুই দেশ একসঙ্গে এগিয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা করেন।

তিনি বলেন, জাপান-বাংলাদেশের নাগরিক পর্যায়ের যোগাযোগের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন কুষ্টিয়ার রাধা বিনোদ পাল। তিনিই জাপানি জনগণের মধ্যে স্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হয় সেই ট্রাইব্যুনালের এগারো জন বিচারকের একজন ছিলেন রাধা বিনোদ পাল। ওই বিচারে এগারো বিচারকের মধ্যে শুধু রাধা বিনোদ পালই জাপানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে জাপানের পক্ষে রাধা বিনোদ পালের রায়ের জন্যই ওই ট্রায়ালের কয়েকজন বিচারক প্রভাবিত হয়ে তাদের রায় কিছুটা নমনীয় করেছিলেন। যা এখনো জাপানিদের মনে আছে। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানি শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য সহায়তা পাঠিয়েছিলেন, এটাও স্মরণযোগ্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২২ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সুবিধার জন্য ‘অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্স’ নামে একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করে জাপান। যার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সরঞ্জাম প্রদানের পাশাপাশি দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রয়োজনের ভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে দেশটি। এই কাঠামোতে নির্বাচিত প্রথম চারটি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট করার লক্ষ্যে যৌথ সমীক্ষা চলছে। এটা হলে, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়বে। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দীন আহমদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, জাপানে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত জামিল মজিদ ও আশরাফ-উদ-দৌলা, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপারসন ড. লাইলুফার ইয়াসমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় শাখার পরিচালক সায়েম আহমেদ, জাইকা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রতিনিধি ইজি. ইয়ামাদা, ঢাকায় জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (জেসিআইএডি) সভাপতি তেতুসুরো কানো এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) মহাসচিব মোঃ আনোয়ার শহীদ, পারি’র প্রেসিডেন্ট ইউওজি আন্দো এবং নির্বাহী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading