সারাদেশ

পঞ্চগড়ে জমে উঠেছে পশুর হাট, মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি

আর মাত্র তিন দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ সময়ে পঞ্চগড়ে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট শালবাহান বাজারে প্রচুর গবাদিপশু উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে যেন তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। হাটে মাঝারি পশুর চাহিদাই বেশি। একই চিত্র জেলার রাজনগর, জগদল, ভজনপুরসহ বেশ কয়েকটি হাটে। 

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই এ অঞ্চলে চা ও পাথর শিল্পে খরা যাওয়ায় অর্থ মন্দার কারণে কোরবানির হাটে মাঝারি পশুর চাহিদাই বেশি। এবার হাটেও ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির পশু কেনাবেচা হতে দেখা যায়। তবে বড় সাইজের পশু বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

শালবাহান হাটে বড় সাইজের গরু বিক্রি করতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার গরুটার ওজন ৮-৯ মণ হবে। দাম ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দামই বলছেন না। শুধু দেখে দেখে চলে যাচ্ছে। অন্য গরুগুলো দাম করছে। কিন্তু এটা কেনার মতো ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছি না।

ভজনপুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা সমারু মোহাম্মদ বলেন, আমার পালিত ষাঁড় গরু হাটে এনেছি। দাম চাচ্ছি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম করছেন ৯০-৯৫ হাজার টাকা। লাখের ওপরে দাম উঠলে বিক্রি করতে পারি। বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে, কিন্তু ক্রেতা কম।

শালবাহান হাটের গরু ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা মাঝারি গরু। এ হাটে ৫০-৯০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কেনাবেচা হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষের অভাব যাচ্ছে। আগে আমরা ২ লাখ থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত গরু বিক্রি করতাম কোরবানির সময়ে। এখন লাখ টাকার ওপরে ক্রেতা সেরকম পাওয়া যায় না। অর্থ মন্দা যাওয়ায় এলাকার মানুষেরা মাঝারি সাইজের গরুই কিনছেন।

ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির পশুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে। যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা সেই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৯০-৯৫ হাজার টাকা।

গরু কিনতে আসা আনোয়ারুল হক জানান, ৮৭ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম। দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। হাটে প্রচুর গরু উঠলেও দালালদের কারণে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

মো. সোয়াইব আলী নামে একজন ক্রেতা বলেন, ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির জন্য গরু কিনলাম। অর্থনৈতিক মন্দা থাকায় তিনজনে ভাগে গরুটা কিনলাম।

কামাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ১২ হাজার টাকা দিয়ে খাসি কিনলাম। প্রচুর ছাগল উঠেছে হাটে।

খাদ্য ও ওষুধের দামের পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শাহজাহান আলী ও আতাউর রহমান জানান, কোরবার সময়ে হাটটা বড় কোনো খোলা মাঠে স্থানান্তর করলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। জায়গা ছোট, গরু কিনতে এসেছিলাম। হাটে এতো পরিমান পশু উঠেছে যে, পা ফেলার মতো অবস্থা ছিল না। আমরা মনে করি, হাট ব্যবস্থাপনার চরম গাফিলতি রয়েছে।

এদিকে হাট ঘুরে ভারতীয় কোন পশু উঠেছে কীনা তা সন্ধান করলে চোখে পড়েনি। তবে একটি সূত্র বলছে, হাটে আগের মতো অবৈধপথে আসা গরু তোলা হয় না। অবৈধপথে আসা গরু সরাসরি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

শালবাহান হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, শেষ মুহূর্তে হাটে প্রচুর পশু উঠেছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। জাল টাকা শনাক্তের জন্য ব্যাংক ও ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না, ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু বেচাকেনা করছেন। কোনো অব্যবস্থাপনা নেই। কারও সমস্যা হচ্ছে এ রকম কোনো অভিযোগ কেউ করেননি।

পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, এ বারের ঈদে চাহিদার চেয়ে গবাদিপশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় পশুর খামার রয়েছে ১৪ হাজার ৮০৯টি। এ বছর কোরবানির জন্য গবাদি পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৮টি। প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৭১টি গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু ৪০ হাজার ৮৩০টি, মহিষ ৪৬টি, ছাগল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০১ এবং ভেড়া ১০ হাজার ৯৯০টি। উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ৪৫ হাজার ১৯৪টি। হাটগুলোতে সুস্থ্য-সবল পশু বেচাকেনায় সহযোগিতার জন্য মেডিকেল টিম কাজ করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading