অতিথি আপনার বাসায় ঢোকামাত্র যেসব বিষয় খেয়াল করেন
খুব অল্প সময়ের নোটিশে কেউ বাসায় এলে অনেক সময় ঘর গোছগাছ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। একদিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা, আরেক দিকে ঘর গোছানো; দুইয়ে মিলে জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয় মাঝেমধ্যে। বিশেষ করে আপনি যদি খুঁতখুঁতে স্বভাবের হন, সবকিছু খুব চমৎকারভাবে গোছাতে পছন্দ করেন, তাহলে অতিথি আসার আগে ঘর গোছানোর কাজটি হয় আরও কঠিন। আগে বাসার ঝুল ঝাড়ব, নাকি আসবাব মুছব? মনে হতে থাকে যেন ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা?’ অতিথিরা বাসায় ঢোকামাত্রই কোন বিষয়গুলো তাঁদের চোখে পড়ে, তা জানা থাকলে সেসব দিকই আগে ঠিকঠাক করে নেওয়া যায়। চলুন জানা যাক, অতিথিরা সাধারণত কোনো বাসায় যাওয়ার পর কোন কোন বিষয় বেশি খেয়াল করেন।
সুগন্ধ:
বাসায় অতিথিকে স্বাগত জানাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো সুগন্ধ। নিজের বাসার গন্ধ আমরা অনেক সময় নিজেরা টের পাই না। তাই বাসায় কোনো গন্ধ থাকলে জানালা খুলে দেওয়া, এসেনশিয়াল ওয়েল ডিফিউজার চালু করা কিংবা সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাসায় যদি কোনো পোষা প্রাণীর মলমূত্রের দুর্গন্ধ থাকে, তাহলে লিটার বক্সগুলো বদলে ফেলুন, পোষা প্রাণীর বিছানা পরিষ্কার করুন, দ্রুত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে সবকিছু একবার পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
আলোকসজ্জা:
আলোর কারণে একটি সাধারণ ঘরও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই ঘরের আলোকসজ্জা অতিথিদের স্বাগত জানাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপারটা তাঁরা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল করেন। বাসার কোনো কোনো টেবিলে ল্যাম্প বসিয়ে দিলে কিংবা উষ্ণ আলোর বাল্ব ব্যবহার করলে আলোকসজ্জা আরও সুন্দর হয়। ঘরে কম আলো মনমরা ভাব আনে, তাই উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা রাখুন। প্রাকৃতিক আলো হলে তো কথাই নেই, প্রয়োজনে উষ্ণ আলোর বাল্ব ব্যবহার করুন। পরস্পরকে দেখতে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে আলো অবশ্যই থাকা চাই ঘরে। বাসায় অতিথি যদি সন্ধ্যায় আসে তাহলে শুধু মাথার ওপরের লাইটগুলোর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আরও কিছু আলোর উৎস (যেমন স্ট্রিং লাইট, টেবিল ল্যাম্প ইত্যাদি) যোগ করুন। আর পারিবারিক জমায়েত যদি দিনের বেলা হয়, তাহলে পর্দাগুলো সরিয়ে দিন, যাতে ঘরে যথেষ্ট পরিমাণে আলো ঢুকতে পারে।
এলোমেলো ঘরবাড়ি:
আপনার বাসা যদি অগোছালো হয়, তাহলে অতিথিদের চোখে সেটা পড়বেই। ডাইনিং টেবিল কিংবা কিচেন কাউন্টারের মতো জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন থাকলে অতিথিরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
বাথরুম ও রান্নাঘর পরিষ্কার আছে কি না?
অতিথি আসার আগে বাসার প্রতিটি কোনা ঝকঝকে তকতকে রাখা সব সময় সম্ভব হয় নয়। তবে বাথরুম আর রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা আপনার সুরুচির পরিচয় বহন করে। বাথরুমে দাগ-ময়লা বা দুর্গন্ধ থাকা অতিথিদের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর, আপনার জন্য তো বটেই।
বাসার গাছগাছালি:
ইনডোর প্ল্যান্ট রাখলে ঘরটি দেখতে বেশ প্রাণবন্ত লাগে। ঘরের ভেতর গাছ থাকলে অবশ্যই সেসবের যত্ন নিতে হবে। মরা পাতার গাছ বা রুগ্ণ গাছ এক কোনায় পড়ে আছে, এটা দেখলে অতিথিরা মনে করবেন আপনি গাছের দেখভালও ঠিকঠাক করতে পারেন না।
প্রবেশপথ:
বাড়ির প্রবেশপথে আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা, দেয়ালে শিল্পকর্ম ইত্যাদি রাখলে বাসায় ঢোকামাত্রই সেসব অতিথির নজর কাড়ে। তাই বাসায় ঢোকার স্থানগুলো সাজিয়ে রাখুন সুচিন্তিতভাবে।
আসবাব:
আসবাব যে খুব দামি হতে হবে, তা নয়। ছিমছাম সুন্দর ডিজাইনের আসবাব বাসায় আগত অতিথিদের নজর কাড়বেই। বেশি আসবাব দিয়ে ঘর ভরে ফেলবেন না। ঘরে যথেষ্ট খোলামেলা জায়গা রাখুন। আসবাবগুলো একই ঘরানার হলে চোখের জন্য আরামদায়ক হয়ে উঠবে। আসবাবের রঙও বাছাই করুন একইভাবে।
শূন্য দেয়াল:
বাসার দেয়ালে ফ্রেমে বাঁধাই করা শিল্পকর্ম বা আলোকচিত্র ঝুলিয়ে রাখুন। এতে আপনার ঘরের পরিবেশ হয়ে উঠবে আরও আকর্ষণীয়। তবে সেসব অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দেয়ালে একটা সুন্দর ছবি ঝুলছে, কিন্তু তার পাশ থেকে বেয়ে পড়ছে ঝুল আর মাকড়সার জাল—অতিথি এমন দৃশ্য দেখলে আপনার সম্পর্কে নিশ্চয়ই উচ্চ ধারণা পোষণ করবেন না।
মিউজিক:
সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় ল্যাপটপ বা ব্লু-টুথ স্পিকারে গান বাজাতে অনেকেই পছন্দ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে জমায়েতের আবহ ও অতিথিদের পছন্দের সঙ্গে মিল রেখে গান বা মিউজিক নির্বাচন করা বাঞ্ছনীয়।
তাপমাত্রা:
বাসার পরিবেশ গরমের দিনে অতিরিক্ত গরম বা শীতের দিনে অতিরিক্ত ঠান্ডা যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই একটি বিষয় অতিথিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাপমাত্রার সঙ্গে মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি সরাসরি যুক্ত। বাসার ড্রয়িংরুমে অতিথি এসে বসামাত্রই ফ্যান চালু করে দিতে ভুলবেন না। গরমের দিনে ঘরে এসি চালাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে আগে জিজ্ঞেস করে নিন এসির বাতাসে তাঁর কোনো সমস্যা হয় কি না।