মহারাষ্ট্রে এনডিএ জোটের বিপর্যয়ের কারণ পেঁয়াজ?
গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভারতের পশ্চিমাঞলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে রীতিমতো বিপর্যয় ঘটেছে বিজেপি-এনডিএ জোটের। গত নির্বাচনে যেখানে রাজ্যের ৪৮টি লোকসভা আসনের ৪৫টিতেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি-এনএডিএ, সেখানে এবারের নির্বাচনে এই জোট পেয়েছে মাত্র ১৭টি আসন।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বিজিপি-এনডিএ জোটের এই ফলাফল বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে পেঁয়াজ। রাজ্যের পেঁয়াজচাষী এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রায় সবাই কংগ্রেস ও দলটির নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোটের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন।
বিনায়ক নালাগে নামের এক কৃষক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রায় ছয় মাস নিষেধাজ্ঞা থাকায় আর্থিকভঅবে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন রাজ্যের পেঁয়াজচাষীরা। তাই সঙ্গত কারণেই কৃষকরা বিজেপি এবং রাজ্যে ক্ষমতাসীন শিব সেনা (শিণ্ডে)’র প্রতি খুবই ক্ষুব্ধ।
প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের আরেক নাম ‘ভারতের পেঁয়াজের রাজধানী’। প্রতি বছর দেশটিতে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, তার শতকরা ৬০ ভাগের যোগান আসে এই রাজ্যটি থেকে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মরিশাসে পেঁয়াজ রপ্তানি করে ভারত।
গত নভেম্বরের দিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম খানিকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম পর্যায়ে সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। পরে তার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করে ভারত।
লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ৪ মে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার, তবে পেঁয়াজের ওপর অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করে।
ইকোনমিক টাইমসকে বিনয়াক বলেন, ‘২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত পাইকারি বাজারে আমরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ রুপিতে বিক্রি করেছি; কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০-১২ এমনকি অনেক সময় ৭ রুপিতেও বিক্রি করতে হয়েছে।’
‘এখন যদিও রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে, তবে শুল্ক আরোপ করায় এখনও আমরা লোকসানের শিকার হচ্ছি। এই সরকার গত ছয় মাস ধরে আমাদের লুট করছে।’
মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজচাষীদের সংগঠন ‘মহাভারত কন্দ উৎপাদক সংগঠন’র নেতা ভারত দিঘোলে ইকোনমিক টাইমসকে জানান, এবারের নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপি-শিব সেনা (শিণ্ডে) প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, এক্সে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছিলেন তারা।
‘আমরা মাঠে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করিনি। প্রচার-প্রচারণা যা হয়েছে, তার অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এখন মনে হচ্ছে, আমরা অনেকাংশে সফল হয়েছি।’
উল্লেখ্য, ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে লোকসভার আসন সবচেয়ে বেশি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে— ৮০টি। এই তালিকায় ৪৮টি আসন নিয়ে উত্তরপ্রদেশের পরেই আছে মহারাষ্ট্র।