ধর্ম

যাকাতের টাকায় এতিমখানায় ইফতার করানো যাবে?

যাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান ও ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। সমাজের বিত্তশালীদের ওপর যাকাত আদায় ফরজ। যাকাত সম্পদ পবিত্র করে, বিত্তশালীদের পরিশুদ্ধ করে, দারিদ্র্য মোচন করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে এবং সমাজে শান্তি আনে। 

যাকাত আদায়ের গুরুত্ব

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰

‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১১০)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۝۵۶

‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’ (সূরা নূর : ৫৬)

যারা যথাযথভাবে সম্পদের যাকাত আদায় করে তাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তায়ালা। বর্ণিত হয়েছে,

وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۱۶۲

‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ১৬২)

যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

যাকাত আদায়ের পুরস্কারের পাশাপাশি পবিত্র কোরআনে যাকাত অনাদায়ের শাস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সূ রা তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।

জাকাতের সম্পদ ব্যয়ের খাত মোট আটটি-

এক. গরিব-ফকির— যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। দুই. মিসকিন— যাদের কোনো সম্পদ নেই। তিন. ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক জাকাত, সদকা, ওশর ইত্যাদি উসুল করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি। চার. ইসলামের দিকে ধাবিত করার জন্য জাকাত দেওয়া। তবে এ খাতটি বর্তমানে আর প্রযোজ্য নয়। পাঁচ. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। ছয়. পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল না থাকার দরুণ ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণী ব্যক্তি। সাত. যোদ্ধা, যারা যুদ্ধের অস্ত্র যোগাতে অক্ষম অথবা টাকার কারণে হজের কাজ পূর্ণ করতে অক্ষম বা ইলম হাসিল ও দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত গরিব মানুষ। আট. সফর অবস্থায় অভাবগ্রস্ত মানুষ।

যাকাতের টাকায় এতিমখানায় ইফতার করানো যাবে?

যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে সাধারণত, এতিমখানা বা মাদরাসার গরিব এতিম ছাত্রদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মূল শর্ত হলো— প্রকৃত হকদারকে তার পাওনা অর্থাৎ যাকাতের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া এবং মালিক বানিয়ে দেওয়া।

তাই কেউ যদি এতিম এবং প্রকৃত হকদারদের টাকার মালিক না বানিয়ে সরাসরি তাদেরকে ইফতার করাতে চায় বা ইফতার করায় তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

কারণ, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মূল শর্ত হলো— প্রকৃত হকদারকে তার পাওনা অর্থাৎ বুঝিয়ে দেওয়া এবং মালিক বানিয়ে দেওয়া। তবে যদি যাকাতের নিয়তে ইফতার সামগ্রী ক্রয় করে এবং কোনো গরিব ও যাকাতের হকদারকে এর মালিক বানিয়ে দেয়, এবং দরিদ্র ব্যক্তির তা ইচ্ছেমতো নিয়ে যাওয়া, খাওয়া বা নিজের পছন্দের কাউকে দেওয়ার অধিকার পায় তাহলে যাকাত আদায় হবে। (আলমুহিতুল বুরহানি : ৩/২১৫; আলবাহরুর রায়েক : ২/২০১; রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৭)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading