ঝিনাইদহের হাজার হাজার কৃষক জিকে সেচ প্রকল্পের পানি থেকে বঞ্চিত, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির শঙ্কায় মাথায় হাত ভুক্তভোগী কৃষকদের। পাম্প নষ্টের অজুহাতে বোরো মৌসুমে এবারো পানি দিচ্ছে না গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। এতে ঝিনাইদহ অংশের হাজার হাজার কৃষকের বোরো আবাদে উৎপাদন খরচ বাড়বে কয়েক গুণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কুষ্টিয়ায় ৩টি পাম্পের মধ্যে ২টি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকার কারণে ঝিনাইদহ ও মাগুরায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। নষ্ট পাম্প ২টি দ্রুত মেরামত করে পানি সরবরাহের দাবি কৃষকসহ এলাকাবাসীর। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকার গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রধান সেচ খালটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে আছে। গত মৌসুমে এই খালে কিছুটা পানি সরবরাহ করা হলেও এবার পানি সরবরাহ করার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে খাঁ খাঁ করছে সেচ প্রকল্পের খালগুলো। এই খালের পাশ দিয়েই ধানের আবাদ করতে ডিজেল চালিত সেচ পাম্প থেকে টাকা দিয়ে পানি নিতে হচ্ছে এলাকার কৃষকদের। এই সেচ পাম্পের পানি দিয়ে ধান রোপণের জমিতে চলছে প্রস্তুতি কাজ, আবার কোনো জমিতে চলছে ধানের চারা রোপণ। অথচ সরকারি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে অন্য বছর এই খালের পানি দিয়েই ধানের আবাদ করতেন তারা।
কৃষকরা বলছেন, জিকে সেচ খালের পানি দিয়ে ধানের আবাদ করতে খরচ হয় ৩০০ টাকা। অথচ ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের পানি কিনে আবাদ করতে লাগবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও জিকের পানিতে ধানের ফলনও বেশি হয়। তাই ভরা এই মৌসুমে দ্রুত পানি সরবরাহের দাবি এলাকার হতদরিদ্র কৃষকদের। এলাকার অধিকাংশ কৃষকের পক্ষে এত টাকা দিয়ে পানি কিনে চাষ করা সম্ভব হবে না। যে কারণে অনাবাদি থেকে যেতে পারে শত শত একর জমি। সেচ এলাকার কৃষক চাঁন আলী মিয়া জানান, ভরা মৌসুমে জিকে খালে পানি না থাকায় চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমরা বোরো মৌসুমে যাতে ধানের আবাদ ঠিকমতো করতে পারি সেই জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন দ্রুত নষ্ট পাম্প মেরামত করে পানি সরবরাহের দাবি জানাচ্ছি। কৃষি উদ্যোক্তা পারভেজ জানান, ভরা এই মৌসুমে দ্রুত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না করা হলে আমরা ধানের ফলন কম পাবো। এই ধান বিক্রি করে আমাদের খরচ তোলা সম্ভব হবে না।
এতে করে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই আমি দ্রুত সেচের পানি সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব জানান, আমরা পানি সরবরাহের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান করা হবে। এই সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হলে এলাকার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় জিকে সেচ খালের আওতায় যেসব সেচ যোগ্য জমি রয়েছে তার পরিমাণ ২৭ হাজার হেক্টর জমি হতে পারে।