অন্যান্য

পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তিন বিভাগে কম

দেশের তিনটি বিভাগের পল্লি এলাকায় পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে গেছে। বিভাগ তিনটি হলো বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ (ষষ্ঠ) জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৮ নভেম্বর জাতীয় এই প্রতিবেদন (ভলিউম ১) প্রকাশ করে বিবিএস।

বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১১ সালের শুমারি (পঞ্চম) থেকে বরিশাল বিভাগে পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। এবারের শুমারিতেও এই হার কম। এই তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের নাম। এই তিন বিভাগেই পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক।

বিবিএসের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভাগ তিনটিতে মূলত তিন কারণে পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। প্রথমত, এই তিন বিভাগে পুরুষের অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হওয়ার হার বেশি। দ্বিতীয়ত, নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি। তৃতীয়ত, ছেলেসন্তানের তুলনায় মেয়েসন্তানের জন্মের হার বেশি।

এবারের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে নারীর সংখ্যা ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ১৬৩ জন। পুরুষ ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ জন।

ময়মনসিংহ বিভাগে নারীর সংখ্যা ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫৭ জন। পুরুষ ৫৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৩৩ জন।

রংপুর বিভাগে নারীর সংখ্যা ৮৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। পুরুষ ৮৭ লাখ ৩১ হাজার ৪১৫ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একক কোনো কারণে এই তিন বিভাগে পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম, এটা বলা ঠিক হবে না। তিনটি বিভাগে কর্মসংস্থান হওয়ার মতো শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠেনি। এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলক বেশি। এ কারণে পুরুষের অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হওয়ার প্রবণতা বেশি। পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। ছেলেসন্তান জন্মের হার কম, এটিও একটি কারণ হতে পারে। এর বাইরে নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি—এটি একটি কারণ হতে পারে। এসব কারণে এই তিন বিভাগে পুরুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হতে পারে।

বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগের মানুষ নিজ এলাকায় বসবাস করে সবচেয়ে কম। সেখানকার ৭৮ শতাংশ মানুষ নিজ বিভাগে অবস্থান করছে। একই বিভাগের সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১৯ ভাগ মানুষ ঢাকায় অবস্থান করছে।

অন্যদিকে, সিলেট বিভাগের মানুষ নিজ বিভাগে সবচেয়ে বেশি বসবাস করে। এখানকার ৯৬ শতাংশ মানুষই নিজ বিভাগে বসবাস করছে। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ ঢাকায় অবস্থান করছে।

গত বছরের ১৫ থেকে ২১ জুন দেশজুড়ে ষষ্ঠ জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে এখন মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। এর মধ্যে নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার (৫০.৪৬ শতাংশ)। পুরুষ ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার (৪৯.৫৪ শতাংশ)। অর্থাৎ জাতীয়ভাবে দেশে এখন পুরুষের তুলনায় নারী প্রায় ১৬ লাখ বেশি।

অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাইরে অন্য এলাকায় এখনো ভারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। সে কারণে মানুষ এখনো ঢাকামুখী হচ্ছে।

সবশেষ জনশুমারিতে দেখা যায়, জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৪০৬ জন বসবাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে কম রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায়। সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৩ হাজার ৪৪৫ জন।

প্রতিবন্ধীর ব্যক্তির হার খুলনায় বেশি

জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২২ লাখ ৬৫ হাজার ২০১ জন, যা মোট জনগোষ্ঠীর ১ দশমিক ৩৭ ভাগ। দেশে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হার খুলনায়, ১ দশমিক ৭১ ভাগ। ঢাকায় সর্বনিম্ন ১ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading