নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস। তিনি ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এ দম্পতি।
জানা যায়, মোহাম্মদ আলী ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ২০০১ সালে ভোট করে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নৌকার মনোনয়ন পেলেও ঋণ খেলাপির কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন নি তিনি। তার স্থানে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নৌকার মাঝি হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়েশা ফেরদাউস মনোনয়ন দাখিল করলেও মূলত তিনিসহ দলের সবাই চাচ্ছেন মোহাম্মদ আলী এবার নির্বাচন করুক। দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মোহাম্মদ আলী দ্বীপ বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
নির্বাচন নিয়ে মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০৮ সালে নৌকা পেয়েও আমি নির্বাচন করতে পারিনি। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস না থাকলে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী থাকতো না। সে কৌশল হিসেবে আমি নৌকার প্রার্থী হলেও আমার স্ত্রীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখেছি। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যখন নৌকার প্রার্থী ছিলেন তখন আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। আসলে আমি দীর্ঘদিন হাতিয়া দ্বীপের সাত লাখ জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে কাজ করে আসছি। আমার স্ত্রী ও দুইবারের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের অনুরোধে এবার নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন। আমি হাতিয়ার সার্বিক উন্নয়নে মানুষের পাশে থাকতে চাই।
নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার প্রত্যয় জানিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাতিয়ার যত দাবি ছিল প্রায় সবগুলো দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করেছেন। তিনি শতভাগ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, নদী ভাঙন রক্ষায় ৩৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। এখন মূল সমস্যা হল নৌ পারাপার। সর্বশেষ সি ট্রাক দেওয়া হয়েছে ২০১০ সালে। এটি সাত-আট বছর পর ভাল সার্ভিস দেয় না। ফলে হাতিয়ার মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নৌ পারাপার নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তিত। আমি জয়ী হলে হাতিয়ার নিরাপদ নৌ যোগাযোগ করব।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন তাই মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলাম আমি। আসলে আমি ২২ বছর আগে নির্বাচন করেছি। মাঝে ১০ বছর আমার স্ত্রী সংসদ সদস্য ছিল। বর্তমান সংসদ সদস্য আমার স্ত্রীসহ হাতিয়ার মানুষ এবার আমাকে প্রার্থী করেছে।
উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাতিয়ার মানুষ নির্বাচন হলে নারী-পুরুষ সবাই অংশগ্রহণ করে। আমাদের হাতিয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ভোট হবে। আমরা চাইবো স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন, যেন সবাই অংশগ্রহণ করে। আমি চাইব সব দল যেন অংশগ্রহণ করে। তারা যেন ভালোভাবে তাদের প্রচার প্রচারণা চালাতে পারে সেদিকে আমাদের খেয়াল থাকবে।
বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েশা ফেরদাউস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দুইবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। হাতিয়ার মানুষ আমার সাথে ছিল। এবার আমি আমার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর জন্য কাজ করব।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খাইরুল আনম চৌধুরী সেলিম, হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় প্রায় সাত লাখ লোকের বসবাস। বেশিরভাগ মানুষ জেলে পেশায় জড়িত হলেও শিক্ষায় সাক্ষর রেখেছেন পিছিয়ে পড়া এ ভূখণ্ডের বাসিন্দারা। নৌ পারাপার তাদের মূল সমস্যা হলেও নদী ভাঙনও অন্যতম সমস্যা ছিল। একনেকের সভায় ২৮৫ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাশ হওয়ায় মিষ্টি বিতরণ করে বাসিন্দারা।
এবছর নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীসহ ৫ জন।